বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

যে কারণে মেসির প্রতি ক্ষুব্ধ পিএসজি

যে কারণে মেসির প্রতি ক্ষুব্ধ পিএসজি

স্পোর্টস ডেস্ক :
বিশ্ব ফুটবলে এখন ‘টক অব দ্য টাউন’ একটাই। লিওনেল মেসি ও পিএসজির সম্পর্কে ফাটল। এতটাই তেতো যে, মেসিকে আর রাখতেই চাচ্ছে না পিএসজি। কেবল ক্লাব নয়, মেসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে একদল সমর্থক।

এই মেসিকেই কিন্তু বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে বার্সেলোনা থেকে প্যারিসে নিয়ে আসেন পিএসজির ডিরেক্টর নাসের আল খেলাইফি। তাহলে মাত্র দু’বছরের ব্যবধানে কী এমন হলো, চোখের মণি থেকে মেসি হয়ে গেলেন পিএসজির চোখের বালি?

ফুটবলের ভদ্রবালক মেসিও কেন ক্লাব কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে পাড়ি জমালেন সৌদি আরবে? শুধু একটি নয়, এর পেছনে আছে অনেকগুলো কারণ।

রাজনীতি-কূটনীতি

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সৌদি আরবের অবস্থান খুব একটা ভালো নয়। বিভিন্ন বিষয়ে পশ্চিমাদের কাছে সৌদির গ্রহণযোগ্যতা কম। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী এই দেশটি চাচ্ছে নিজেদের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে। তাই সবার আগে খেলাধুলার দিকে নজর দিয়েছে তারা। বিশেষ নজর দিয়েছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া ইভেন্ট ফুটবলের দিকে। এরই মধ্যে মেসিকে সৌদি তাদের পর্যটনদূত বানিয়েছে। সৌদি প্রো লিগের দল আল হিলালে মেসির যাওয়াটা প্রায় নিশ্চিত। এই বিষয়টিকে কোনোমতেই ভালো চোখে দেখছে না ফ্রান্স। মেসির প্রতি ক্ষুব্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ এটি। তাছাড়া পিএসজির মূল মালিকও কাতারের। দুই আরব দেশের মধ্যকার প্রতিযোগিতাও এখানে একটি কারণ।

বিশ্বকাপ ফাইনাল

কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়েই শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছে আর্জেন্টিনা। সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মেসি। ফাইনালেও ছিলেন অসাধারণ। কিলিয়ান এমবাপ্পে সবটুকু উজাড় করে দিলেও পারেননি ফ্রান্সকে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জেতাতে। ফরাসি ভক্তদের হৃদয় ভেঙে দেওয়া সেই ফাইনালের পর মেসিকে সেভাবে গ্রহণ করতে পারছে না প্যারিসিয়ানরা। অনেকটা যেন ঘরের শত্রু  বিভীষণ হয়ে গেছেন মেসি।

এমবাপ্পে-এমি মার্টিনেজ কাণ্ডে মেসির নিরবতা

বিশ্বকাপ ফাইনালের পর আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমি মার্তিনেজ ফরাসি তারকা এমবাপ্পেকে নিয়ে একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলেন। আর্জেন্টিনার ড্রেসিংরুম থেকে শুরু করে বুয়েনস এইরেসের ছাদ খোলা বাসে প্রকাশ্যে এমবাপ্পেকে ছোট করেছিলেন এমি। এমি পরে দুঃখ প্রকাশ করলেও গোটা বিষয়ে মেসি ছিলেন নিশ্চুপ। সব দেখেও কিছুই বলেননি তিনি। ফরাসিদের ঘরের ছেলেকে নিয়ে এভাবে মজা করার পরও মেসি চুপ ছিলেন, যেখানে এমবাপ্পে তার ক্লাব সতীর্থ। পিএসজি সমর্থকরা এটিকে কোনোভাবেই নিতে পারেনি।

বেতনের উচ্চাভিলাষ

চলতি মৌসুমের পর পিএসজির সঙ্গে চুক্তি শেষ হবে মেসির। একটা সময় চুক্তি নবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও বিশ্বকাপ জয়ের পর মেসি বেতনের চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাকে রাখতে হলে দিতে হবে এমবাপ্পের চেয়ে বেশি বেতন। যা মেনে নেয়নি পিএসজি। বেতন বাড়ালেও তা এমবাপ্পের চেয়ে বেশি নয়। মেসি সেটি মানেননি। বেতন নিয়ে বনিবনা হয়নি দুপক্ষের। কারণ, মেসি অনেক বেশি বেতনের লোভনীয় প্রস্তাব মেসি পেয়ে আসছেন বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকেই। সৌদির ক্লাব আল-হিলালই যেমন মেসিকে বছরে ৪০০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি বেতনের আকর্ষণীয় প্রস্তাব দিয়েছে।

পিএসজিতে গুরুত্ব কম পাওয়া

বার্সেলোনায় মেসিই ছিলেন শেষ কথা। পিএসজিতে সেখানে মেসি নন, সর্বেসর্বা এমবাপ্পে। স্বাভাবিকভাবেই ঘরের ছেলের প্রতি আলাদা টান আছে ক্লাবের। তাকে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনাও করছে ক্লাবটি। রিয়াল মাদ্রিদের মতো দল চাওয়ার পরেও এমবাপ্পেকে ছাড়েনি তারা, বরং বেশি বেতন ও সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা দিয়ে রেখে দিয়েছে নিজেদের কাছে। মুখ ফুটে না বললেও মাঠ ও মাঠের বাইরে এমবাপ্পের চেয়ে এই পিছিয়ে থাকাটা একটু হলেও কষ্ট দিচ্ছে মেসিকে। দুজনের বোঝাপড়ায় আন্তরিকতার অভাব তো প্রায়ই দেখা যায় মাঠের ফুটবলে।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ব্যর্থতা

মেসিকে উড়িয়ে আনার পেছনে পিএসজির সবচেয়ে বড় কারণ ছিল উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা। মেসির হাত ধরে পার্ক দে প্রিন্সেসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আসবে, এমন স্বপ্নে সবাই বিভোর থাকলেও মেসি হতাশ করেছেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ ও সমর্থকদের। সঙ্গে দেখা গিয়েছে আরও একটি ব্যাপার। বিশেষ করে বিশ্বকাপ জয়ের পর পিএসজির জার্সিতে মেসির পারফরম্যান্স ঠিক মেসিসুলভ হচ্ছে না। আগে যেমন কথা উঠতো, মেসি ক্লাবের হয়ে ভালো খেলেন, দেশের হয়ে না। এখন যেন পরিস্থিতি উল্টে  গেল। জাতীয় দলের ঝলমলে মেসি ক্লাবে বিবর্ণ।

সবমিলিয়ে মেসি ও পিএসজির দুটি পথ দুটি দিকে বেঁকে গেছে। যাকে দেখতে পারে না লোকে, তার কিছুই যে ভালো লাগে না, তা আরেকবার প্রমাণিত হলো তাদের সম্পর্ক দেখে। ভালোবাসার নগরী প্যারিসের সবুজ জমিনে এখন মেসির প্রতি ঘৃণার চাষ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমনকি একদিন মেসির আগমনকে কেন্দ্র করে উৎসব করা ফরাসিরা এখন প্রতিবাদ জানাচ্ছেন মেসির বাড়ির সামনে। আর্জেন্টাইন তারকার পরিবার তুলে গালি দিতেও ছাড়ছেন প্যারিসিয়ানরা। ফলে শেষ পর্যন্ত তিক্ততা নিয়ে শেষ হতে যাচ্ছে লিওনেল মেসির পিএসজি অধ্যায়।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech